।।জীবন সংগ্রামে সাহায্য প্রার্থী প্রতিবন্ধী জিতেন্দ্র সরকার।।প্রকাশিতঃ ১০ ডিসেম্বর, ২০১৯ মঙ্গলবার রাতঃ০৮;২৫নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকেঃ সঞ্জয় শীল
জেলার নবীনগর কড়ইবাড়ি গ্রামে স্বাভাবিক ভাবেই মায়ের কোলে জুড়ে এসেছিলেন শিশু জিতেন্দ্র সরকার ওরফে জিতেন। বর্তমানে বসবাস করছেন জিনোদপুর গ্রামে। জীবন বাঁচানোর জন্য মুক্তিযুদ্ধের সময় ৬ মাসের জিতেনকে নিয়েই এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করতে হয়েছে মা কাজল বালা সরকারকে। ধীরে ধীরে জিতেন বেড়ে উঠেন স্বাধীন বাংলাদেশে। অজ্ঞাত জ্বরে অসুস্থ হয়ে পড়েন শিশু জিতেন। অভাবের সংসারে স্বল্প শিক্ষিত মা-বাবা গ্রাম্য ডাক্তার থেকে শুরু করে বিভিন্ন কবিরাজের কাছে ছুটে বেড়ান। এক সময় সুচিকিৎসার অভাবে শিশু জিতেনের দুটি পা পঙ্গু হয়ে যায়। পঙ্গু পা’র কারনে শিশু জিতেন যেন সকলের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। অসহায় মা-বাবার প্রচেষ্টায় নিজে বিয়ারিং এর তৈরি তিন চাকার ছোট্ট একটি গাড়ি বানিয়ে দেন। যেন শিশু জিতেন স্কুলে গিয়ে পড়ালেখা করতে পারেন। একদিকে সংসারে অভাব ও দেশের রাজনৈতিক প্রতিহিংসাও যেন আচঁ পড়েছিলেন তাদের পরিবারে। শিশু জিতেনের ছোট্ট মনেই যেন ভয় কাজ করছিল নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে। স্থানিয় কড়ইবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়তেন তিনি। তাই তিন চাকার বিয়ারিং এর গাড়িতে স্কুলে যাওয়ার আগে সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন অন্য বাচ্চাদের কাছে বিক্রি করার মতো সামান্য হাতে তৈরি খাবার। স্কুল শুরু হওয়ার আগে সহপাঠী ও অন্য ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে বিক্রি করে নিজেও স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করতেন। বসতেন স্কুলের মেঝেতে । তিনি জানান, স্কুলের তৎকালিন শিক্ষকরাও তাকে সহযোগীতা করতেন। তখন থেকে ধীরে ধীরে স্কুলের পাশে ব্যবসা করে পরিবারকে করেছেন আর্থিক ভাবে সহায়তা ও চালিয়ে নিয়েছেন নিজের লেখা পড়ার খরচ। স্থানীয় প্রতিবেশী ও পরিবারের সূত্রে জানা যায়, স্কুল থেকে ফিরে এসে জিতেন কখনো বসে থাকেননি। প্রতিবেশি আত্মীয়দের কাছ থেকে স্ব প্রণোদিত হয়ে শিখে নিয়েছিলেন হস্ত নির্মিত কুটির শিল্পের কাজ। নিখুঁত কাজ আয়াত্ব করে চমকে দিয়েছেন তিনি। তিনি জানান, আমি কখনো কার কাছে বোঝা হয়ে থাকতে চাইনি। ৩ বোন ও ৪ ভাইয়ের কাছে বোঝা না হয়ে বরং তিনি নিজেই কঠোর পরিশ্রম করেছেন। এমনকি ২ পা হারানো জিতেন অভাবের সংসারে কখনো ভিক্ষাবৃত্তি করেননি। নিজের আত্মসম্মান বোধের কাছে তিনি সব সময় ছিলেন আত্মবিশ্বাসী। স্থানিয় ইউপি চেয়ারম্যান ব্যবস্থা করে দিয়েছেন সামান্য ভাতার। শারীরিক চাহিদা ও প্রাকৃতিক নিয়মের কাছে হার মেনে বিয়ে করেছিলেন তিনি। তার ২ কন্যা সন্তান রয়েছে। বর্তমানে ২ কন্যা সন্তান জিনোদপুর স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেণীর ছাত্রী। নিজের হাতে তৈরি কুটির শিল্পে কোন রকমে সংসার চলছে তার। বর্তমানে কুটির শিল্পের কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি ও বিক্রি মন্দা থাকায় তিনি পড়েছেন বিপাকে। তিনি আক্ষেপ করে জানান, জীবিত থাকা অবস্থায় দিয়ে যেতে চান ২ মেয়ের বিয়ে। আর্থিক অভাব-অনটনের কারনে তিনি খুব দুশ্চিন্তায় আছেন। এখন শরীরও তেমন ভাল নয় তার। আর যেন কুলিয়ে উঠতে পারছেন না তিনি। নিজের চলা-চল উপযোগী একটি রিক্সাও নেই তার। শরীর ও অস্বচ্ছলতার কারনে এখন আর হাঁটুতে ভর করে চলাফেরা করতে পারেন না তিনি। সমাজ ও রাষ্ট্রের বিত্তবান মানবতাবাদীদের কাছে তার আকুতি তারা যেন তার সাহায্যে এগিয়ে আসেন। তিনি জানান, জীবনে কাউকে কখনো বিরুক্ত করিনি সহযোগীতার জন্য। মেয়েদের লেখাপড়া ও অন্যান্য খরচাধির কারনে তার এখন খুবই অসহায় অবস্থা। শেষ বয়সে এসে তিনি সাহায্য প্রার্থনা করছেন সমাজের অর্থবিত্ত মানব দরদী ভাল মানুষের কাছে। যাদের সাহায্য ও সহযোগীতায় তিনি শেষ জীবনে বাঁচতে চান সুখ নিয়ে।
Leave a Reply