?ভা লো বা সা?
☞লিখেছেনঃ এডওয়ার্ড রিয়াজ মাহামুদ
‘প্রেম চিরসহিষ্ণু, প্রেম মধুর, ঈর্ষা করে না, প্রেম আত্মশ্লাঘা করে না, গর্ব করে না, অশিষ্টাচরণ করে না, স্বার্থ চেষ্টা করে না, রাগিয়া উঠে না, অপকার গণনা করে না, অধার্মিকতায় আনন্দ করে না, কিন্তু সত্যের সহিত আনন্দ করে; সকলই বহন করে, সকলই বিশ্বাস করে, সকলই প্রত্যাশা করে, সকলই ধৈর্যপূর্বক সহ্য করে। প্রেম কখনো শেষ হয় না।’ প্রদত্তবিশেষ সংজ্ঞার আলোকে কয়জন ভালোবাসতে পারেন? পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি উচ্চরিত শব্দগুলোর মধ্যে একটি হলো প্রেম বা ভালোবাসা। যদিও ‘প্রেম’ ও ‘ভালোবাসা’ শব্দযুগল ভিন্ন ভিন্ন অর্থ বহন করে। তবুও পৃথিবীর প্রত্যেকটি প্রাণীর মধ্যে ভালোবাসা বিদ্যমান। ভালোবাসার রং রূপ গন্ধ কিছুই নেই, আছে শুধু অনুভূতি। যার শক্তিতে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত জয় করা সম্ভব। যান্ত্রিক মানুষ পর্বতসম ব্যস্ততা উপেক্ষা করে আজ প্রিয়জনকে বলবে, শুধু তোমাকেই ভালোবাসি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হয়তো ঠিক এমনই মুহূর্তকে স্মরণ করে লিখেছেন, ‘দোহাই তোদের, এতটুকু চুপ কর/ভালোবাসি বারে, দে মোরে অবসর। আজ সেই ভালোবাসার দিন। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস।
অন্যদিকে আজকের এ ভালোবাসা শুধুই প্রেমিক আর প্রেমিকার জন্য নয়। মা-বাবা, স্বামী-স্ত্রী, ভাইবোন, প্রিয় সন্তান এমনকি বন্ধুর জন্যও ভালোবাসার জয়গানে আপ্লুত হতে পারেন সবাই। হতে পারে পরিবার, সমাজ এমনকি দেশের জন্য ভালোবাসা। জানা যায়, দুটি প্রাচীন রোমান প্রথা থেকে এ উত্সবের সূত্রপাত। সুপ্রাচীনকাল থেকে অর্থাত্ ২৬৯ সালে ইতালির রোমান নগরীতে খ্রিষ্টান পাদ্রি ও চিকিত্সক সেন্টভ্যালেইটাইন্স নামক একজন ছিলেন। ফাদার সেন্টভ্যালেনটাইনের নামানুসারে দিনটির নাম নাকি ‘ভ্যালেনটাইনস ডে’ করা হয়। ধর্ম প্রচারের অভিযোগে তত্কালীন রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্রাডিযাস তাকে বন্দি করেন। কারণ তখন রোমান সাম্রাজ্যে খ্রিষ্টান ধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ ছিল। বন্দি অবস্থায় তিনি জনৈক কারারক্ষীর দৃষ্টিহীন এক মেয়েকে চিকিত্সার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন। এতে সেন্টভ্যালেইটাইনের জনপ্রিয়তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজা তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। সেইদিন ১৪ ফেব্রুয়ারি ছিল। অতঃপর ৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিউও ১ম জুলিয়াস ভ্যালেইটাইন্স স্মরণে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন দিবস ঘোষণা করেন। সেই থেকে দিবসটি পালন করা হয়। দিনটি বিশেষভাবে গুরুত্ব পাওয়ার পেছনে রয়েছে আরো একটি কারণ। সেন্টভ্যালেনটাইনের মৃত্যুর আগে প্রতিবছর রোমানরা ১৪ ফেব্রুয়ারি পালন করত ‘জুনো’ উত্সব। রোমান পুরাণের বিয়ে ও সন্তানের দেবী জুনোর নামানুসারে এর নামকরণ। এ দিন অবিবাহিত তরুণরা কাগজে নাম লিখে লটারির মাধ্যমে তার নাচের সঙ্গীকে বেছে নিত। ৪০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে রোমানরা যখন খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীতে পরিণত হয় তখন জুনো উত্সব আর সেন্টভ্যালেনটাইনের আত্মত্যাগের দিনটিকে একই সূত্রে গেঁথে ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘ভ্যালেনটাইনস ডে’ হিসেবে উদ্যাপন শুরু হয়। কালক্রমে এটি সমগ্র ইউরোপ এবং ইউরোপ থেকে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
খ্রিষ্টীয় এই ভ্যালেন্টাইন দিবসের চেতনা বিনষ্ট হওয়ায় ১৭৭৬ সালে ফ্রান্স সরকার কর্তৃক ভ্যালেইটাইন উত্সব নিষিদ্ধ হয়। ইংল্যান্ডে ক্ষমতাসীন উত্সব পিউরিটানরাও একসময় প্রশাসনিকভাবে এ দিবস উদ্যাপন করা নিষিদ্ধ করে। এছাড়া অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও জার্মানিতে বিভিন্ন সমাবেশের পর দিবসটি আবার পালন করা হয়। এই দিবসটি বাংলাদেশে পালিত হয় নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে। প্রথমে শহরগুলোতে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন এর প্রসার ঘটেছে গ্রামে-গঞ্জে, পাড়া-মহল্লায়।
আসলে ভালোবাসার কোনো নির্দিষ্ট দিন নেই। প্রত্যেক দিন, প্রত্যেক মুহূর্তে প্রিয়জনকে ভালোবাসতে হয়। প্রিয় অনুভূতি, স্মৃতি, আবেক দিয়ে সমাজ টিকে আছে। ভালোবাসার আবদ্ধে মানুষ অমর হয়ে থাকে। আজকের এ দিনে সকলের উচিত প্রিয়জনের সঙ্গে সমাজ দেশটাকে ভালোবাসা। ভাষা দিবসের এ মাসে আমাদের পূর্ব পুরুষরা এক সাগর রক্তের বিনিময়ে মায়ের মুখের ভাষা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাদের রক্তে পিচঢালা রাজপথ লাল হয়েছিল। আজ তাদের ভালোবাসার দিন। যে শহীদরা মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের চলাফেরার স্বাধীনতা দিয়েছেন, দিয়েছেন নতুন মানচিত্র— সেই সব বীর শহিদ ও গাজীদের ভালোবাসার দিন। ভালোবাসা দিবসের প্রত্যয় হোক হিংসাত্মক রাজনীতি ভুলে দেশের মানুষের কথা ভেবে, তাদের কল্যাণে কাজ করা। একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠন করা। তবে সুফলা শস্য শ্যামলার দেশ সমৃদ্ধি হবে। সকলের ভালোবাসায় জঙ্গি, কুসংস্কার, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাক পৃথিবীর মানচিত্রে এমন প্রত্যাশা হোক মুজিববর্ষে।
☞লেখকঃ শিক্ষক ও গবেষক।
Leave a Reply