?যে কারণে শিশুদের হাতে স্মার্টফোন দেওয়া বারণ❌
।।দিঘলিয়া ওয়েব ব্লগ প্রযুক্তি ডেস্ক।।
লিখেছেনঃ মাহবুব শরীফ (ঢাকা থেকে)
মুঠোফোন সেবাদানকারী মার্কিন প্রতিষ্ঠান জ্যাক্ট এক জরিপের ভিত্তিতে জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে ১০ থেকে ১৩ বছর বয়সি ৫৬ শতাংশ শিশু স্মার্টফোন ব্যবহারের সুযোগ পায়। আবার দুই থেকে পাঁচ বছর বয়সি ২৫ শতাংশ শিশুর নাগালেও স্মার্টফোন রয়েছে।
কিন্তু এত অল্প বয়সে স্মার্টফোন ব্যবহার কতটা স্বাস্থ্যসম্মত? শিশু মনস্তত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুদের কাছ থেকে স্মার্টফোন কেড়ে নেওয়ার আগে কিছু বিষয় ভেবে দেখার অবকাশ রয়েছে। মিডিয়া সাইকোলজি রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক পামেলা রাটলেজ বলেন, মা-বাবাকে এ ব্যাপারে বাস্তববাদী হতে হবে। কোনো শিশু যদি দলভিত্তিক কর্মকাণ্ড বা খেলাধুলায় খুবই সক্রিয় হয়, তাহলে তার স্মার্টফোন ব্যবহারের সুযোগ লাভের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এ ছাড়া কৌশলগত বা জরুরি প্রয়োজনেও শিশুদের স্মার্টফোন দেওয়া যেতে পারে। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিশুরা নিজেদের সামাজিক পরিমণ্ডলে অন্য শিশুদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারে।
✪শিশুদের স্মার্টফোন আসক্তির ভয়াবহ প্রভাবঃ
সম্প্রতি ভারতের চার্টার বিশ্ববিদ্যালয় তাদের একটি গবেষণায় দেখিয়েছে, স্মার্টফোনের অধিক ব্যবহার চোখের রেটিনা, কর্নিয়া এবং অন্যান্য অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। ১৬ বছর বয়সি মেহেদি প্রাঞ্জলের বাবা আবদুল বারাক বলেন, ‘সম্প্রতি আমি লক্ষ করলাম যে আমার ছেলে আমার মানিব্যাগ থেকে টাকা চুরি করা শুরু করেছে। কারণ এবার এসএসসি ফেল করার কারণে আমি ওকে হাতখরচ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি।’
‘সব আমার দোষ, আমি কেন যে ওকে ফোন কিনে দিলাম!’ হাহাকার করে ওঠেন বারাক। তিনি জানান, মেহেদি যখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে, তখন তিনি ওকে ফোন কিনে দেন। মেহেদি সারাক্ষণ ফোন নিয়ে থাকতেই পছন্দ করে। কারো সঙ্গে কথা পর্যন্ত বলে না। ফোন কেড়ে নিলে প্রচণ্ড হিংসাত্মক হয়ে ওঠে। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে ফোন অনেক কিছু সহজ করে দিয়েছে; পাশাপাশি বয়ে নিয়ে এসেছে বিবিধ সমস্যা।
অবশ্য এই শিশু বিশেষজ্ঞ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন, যার মাধ্যমে শিশুদের ওপর ফোনের কুপ্রভাব কমে যাবে। সেগুলো হলোঃ কথা বলার সময় এয়ারফোন ব্যবহার করা, বাচ্চাদের স্কুলে ফোন নিয়ে যাওয়ার অনুমতি না দেওয়া, শোয়ার ঘরে ফোন নিতে না দেওয়া এবং বাচ্চাদের সঙ্গে মোবাইলের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে কাউনসেলিং করা।
✪স্মার্টফোনের আসক্তি কমাতে অ্যাপলের উদ্যোগঃ
শিশুরা বাবা-মায়ের ফোন নিয়ে এত বেশি সময় কাটাচ্ছে যে অনেক অভিভাবকই এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় আইফোনের আসক্তি থেকে শিশুদের রক্ষা করতে আহ্বান জানাচ্ছেন আইফোন নির্মাতা অ্যাপলেরই দুই বিনিয়োগকারী। এখন বড়ো বিনিয়োগকারীরা অ্যাপলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন, তারা যেন এমন সফটওয়্যার তৈরি করেন, যা শিশুরা কতক্ষণ স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারবে তা সীমিত করে দেবে। এমন দুটি বিনিয়োগ কোম্পানি এই আহ্বান জানিয়েছে, যারা অ্যাপলের দুই বিলিয়ন ডলারের শেয়ারের মালিক।‘জানা পার্টনার্স’ এবং ‘ক্যালিফোর্নিয়া টিচার্স পেনশন ফান্ড’ নামে এ দুটি প্রতিষ্ঠানের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে অ্যাপলকে ‘ডিজিটাল লক’ চালু করার আহ্বান জানানো হয়। এতে বলা হয়, শিশু-কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহার যে প্রভাব ফেলছে, তা অ্যাপলকে বিবেচনা করতে হবে। তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন, অ্যাপল যদি এই ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের ব্যাপারে কিছু না করে, তাহলে তাদের সুনাম এবং স্টক মার্কেটে তাদের মূল্য উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
সম্প্রতি বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধেক টিনএজার মনে করে যে তাদের মোবাইল ফোনের প্রতি আসক্তি তৈরি হয়ে গেছে। তারা একধরনের তাড়না বোধ করে যে মোবাইল ফোনে মেসেজ এলে সঙ্গে সঙ্গেই তার জবাব দিতে হবে। শিশুদের প্রযুক্তি ব্যবহার নিয়ে গবেষণা করা শিক্ষাবিদেরা একে স্বাগত জানিয়েছেন। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের সামাজিক মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক সোনিয়া লিভিংস্টোন জানান, এই আহ্বান শুনে তিনি খুশি হয়েছেন।
✪অতিরিক্ত টাচ স্ক্রিন ব্যবহারে শিশুদের যে ক্ষতি হয়ঃ
এখনকার শিশুরা মোবাইল ফোন বা ট্যাবের টাচ স্ক্রিনে ভিডিও গেমস খেলে কাটায় অনেকটা সময়। প্রাপ্তবয়স্কদের থেকেও তারা অনেক বেশি প্রযুক্তি পারদর্শী। বাবা-মায়েরাও বাচ্চাদের ব্যস্ত রাখার জন্য নিজের স্মার্টফোন তাদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে থাকেন। ফলে স্মার্টফোন ঘাঁটতে ঘাঁটতে শিশুরাও অ্যাডিক্টেড হয়ে পড়ছে। আপনিও কি শিশুর হাতে স্মার্টফোন ধরিয়ে দিচ্ছেন? তাহলে জেনে নিন টাচ স্ক্রিন স্মার্টফোন শিশুর কী কী ক্ষতি করছে। গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত টাচস্ক্রিন স্মার্টফোন, ট্যাবলেট বা ভিডিও গেমের ব্যবহার শিশুর ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। এর ফলে শিশু ক্রমশ পেনসিল ধরতে অক্ষম হয়ে পড়তে পারে।
চিকিত্সকদের মতে, টাচ স্ক্রিন ফোন কিংবা ট্যাবলেট ব্যবহার করার সময় শিশুদের আঙুলের পেশি সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে বাধা পায়। আঙুলের জোর বাড়ে না। ফলে যখন তারা পেনসিল ধরতে গেলে আঙুলে জোর পায় না। আঙুল সঠিকভাবে নড়চড়াও করতে পারে না।
Leave a Reply