।।স্মার্টফোন রুট করার যত সুবিধা-অসুবিধা।।
০১:৩০ পিএম ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯
মোজাহেদুল ইসলাম
রুট শব্দের বাংলা অর্থ হলো ‘শিকড়’। রুটিং করার মানে হলো ফোনের সফটওয়্যারের শিকড়ের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়া। এবং সেখানে পৌঁছে যাওয়ার পরে ফোনটির সফটওয়্যারের সকল নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতে হয়ে যাবে।
★রুটের সুবিধাসমুহঃ
রুট করার কিছু সুবিধাও রয়েছে। প্রথম সুবিধাটি হলো একবার আপনি আপনার ফোনকে রুট করে নিলেন তারপর আপনি আপনার ফোনটির সঙ্গে যা ইচ্ছা তাই করতে পারবেন। যা ইচ্ছা তাই বলতে একদম যা যা আপনার ইচ্ছা। প্লে স্টোরে এমন অনেক অ্যাপ আছে যারা শুধু রুটেড ফোনকে সমর্থন করে থাকে। এবং সেই অ্যাপগুলো ডাউনলোড করার পরে অ্যাপগুলোকে সুপার ইউজার অনুমতি দেওয়ার মাধ্যমে তাদেরকেও আপনি ফোনটির মূল পর্যন্ত প্রবেশের অনুমতি দিতে পারেন। এবং সেই অ্যাপগুলো সফটওয়্যারের মূলে প্রবেশ করে আপনাকে অসাধারণ সব কার্যক্ষমতা দেখাতে সক্ষম হবে। রুট করার পরে এমন হাজারো অ্যাপ আছে যার দ্বারা আপনি হাজারো ফিচার উন্মুক্ত করতে পারবেন। যেমন ফোনের ব্যাটারি লাইফ বাড়াতে পারবেন, ওভার ক্লকিং করাতে পারবেন, প্রসেসর আন্ডার ক্লকিং করাতে পারবেন, ফোনের রম পরিবর্তন করতে পারবেন ইত্যাদি। অর্থাত্ রুট করার পরে আপনার ফোনকে একদম হাই অ্যান্ড ফোন বানাতে পারেন আবার ফোনের কার্যক্ষমতা কমিয়ে প্রচুর ব্যাটারি সেভ করাতে পারেন, তো সবকিছুই মোটামুটি আপনার হাতে।
★রুটের অসুবিধাসমূহঃ
n ফোন রুট করার সর্বপ্রথম অসুবিধা হলো আপনার ফোনটির যদি ওয়ারেন্টি থাকে তবে তা বাতিল হয়ে যাবে। সব ফোন নির্মাতা কোম্পানিরা হয়তো এটা করে না, কিন্তু বেশির ভাগ বড় বড় কোম্পানি যেমন স্যামসাং, সনি, এইচটিসি ইত্যাদি রুট করাকে সমর্থন করে না। ফোন রুট করা হলে তারা সঙ্গে সঙ্গে ওয়ারেন্টি বাতিল করে দেয়, কারণ রুট করার পরে আপনি যদি ফোনটির সঙ্গে কোনো গন্ডগোল পাকিয়ে ফেলেন তবে তার দায়িত্ব এই কোম্পানিরা নিতে চাই না। তবে কিছু চাইনিজ কোম্পানি যেমন ওয়ান প্লাস বা সাওমি এরা কিন্তু রুট করাকে সমর্থন করে এবং আপনি ফোনটি রুট করলেও তারা ওয়ারেন্টি বহাল রাখে।
n আপনি রুট করার সময় যদি কোনো ধাপে সামান্য ভুল করে ফেলেন, তবে আপনার ফোনটি শুধু মাত্র একটি প্ল্যাস্টিক বা পলিমার এর বাক্সে পরিণত হতে পারে। আপনার ফোনটি শুধু চোখ দিয়ে দেখতেই পাবেন, কোন কাজ হবে আর এতে। মানছি যে, এই অবস্থা থেকেও ফোনকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা সম্ভব। কিন্তু একজন সাধারণ ব্যবহারকারীর ক্ষেত্রে অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হতে পারে। আসলে সমস্যা রুটিং করার পদ্ধতির সঙ্গে নেই, সমস্যা হলো অনেক সময় ইউজাররা সঠিকভাবে নির্দেশনাগুলো পালন না করেই ফোন রুট করতে আরম্ভ করে দেয়, ফলে প্রায়ই ভুল হয়ে যায়। অনেক সময় জলদি জলদি করতে গিয়ে অনেকে ধাপগুলো লাফিয়ে চলে যায়, ফলে ফোনের খারাপ অবস্থা হয়ে যায়।
n আপনি যদি একবার আপনার ফোনটিকে রুট করে নেন তবে আপনার ফোনটির সুরক্ষা ব্যবস্থা আর অ্যান্ড্রয়েডের হাতে থাকবে না। অ্যান্ড্রয়েডের যে নিজস্ব সুরক্ষা স্তর সেটি একভাবে নষ্ট হয়ে যাবে, আপনি তো সুরক্ষা স্তর ভেদ করেই এর শিকড়ে পৌঁছালেন। এখন অনেক ম্যালিসিয়াস সফটওয়্যার আছে যারা শুধু রুট করা ফোনকেই আক্রান্ত করতে পারে। এবং ফোনটির অথবা আপনার তথ্যের নিরাপত্তা নষ্ট করতে পারে। তাই রুট করার সঙ্গে সঙ্গে অবশ্যই আপনি ফোনটির ইনবিল্ড সুরক্ষা স্তরটি নষ্ট করছেন, এবং এর জন্য অবশ্যই আপনাকে আরো সতর্ক থাকতে হবে। এবং কোনো কারণে যদি কোনো ম্যালওয়্যার যুক্ত সফটওয়্যার আপনার ফোনে প্রবেশ করে তবে সেটা অনেক বড়ো চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
n আপনার ফোনটি যদি সদ্যপ্রাপ্ত নতুন ভার্সনে চলে তবে আপনার জন্য রুট এখনো সম্ভব নয়। মনে করুন আপনার ফোনটি প্রথমে ললিপপে চলত, তারপর আপনি মার্সম্যালো আপডেট পেলেন, এখন মার্সম্যালো নতুন ওএস ভার্সন হওয়াই এটার রুট করার পদ্ধতি পেতে আপনার সময় লাগতে পারে। কেনোনা রুট সবসময় বর্তমান প্রাপ্য অ্যান্ড্রয়েড ভার্সনের ত্রুটি থেকে করা হয়। যারা রুটিং পদ্ধতি আবিষ্কার করেন তারা সবসময় অ্যান্ড্রয়েড ভার্সনের ত্রুটিকে কাজে লাগিয়ে রুট করেন, এবং আপনাকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দিতে সক্ষম হোন। কিন্তু নতুন ভার্সন এলে প্রথমে সেটার ত্রুটি খুঁজতে হয়, তো এতে রুটিং পদ্ধতি পেতে কিছু দেরি হতে পারে। আরেক বিষয় হলো, রুট করলে কিন্তু আপনি ফোনে অফিসিয়াল সফটওয়্যার আপডেট পাবেন না। যেটাকে ওটিএ আপডেট বলা হয়। তবে রুট করার পরে আপনি যে কোনো রম দিয়ে ফোনটিকে ফ্ল্যাশ করে নিতে পারেন।
Leave a Reply