।।সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যাঃপাঁচ জনের মৃত্যুদণ্ড।।
বিবিসি বাংলা বিভাগ(লন্ডন) থেকে
গত বছর সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে তুরস্কে হত্যার ঘটনায় সৌদি আরবের একটি আদালত গতকাল সোমবার পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। একই ঘটনায় তিনজনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সৌদি সরকারের কঠোর সমালোচক জামাল খাসোগিকে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটের ভেতরে হত্যা করা হয়। সৌদি আরবের একদল এজেন্ট এই হত্যাকাণ্ড ঘটায় বলে অভিযোগ আছে।
সৌদি আরবের সরকারি কৌঁসুলি দাবি করেছেন, কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ এবং অনুমোদনের বাইরে গিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। মোট ১১ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে এই ঘটনার জন্য বিচারের মুখোমুখি করা হয়। জাতিসংঘের একজন বিশেষজ্ঞ এই ঘটনাকে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বলে বর্ণনা করেছিলেন। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তা অ্যাগনেস ক্যালামার্ড এই ঘটনায় সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সংশ্লিষ্টতা তদন্তেরও আহ্বান জানিয়েছিলেন। যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান অবশ্য এ ঘটনার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেছেন।
যেভাবে হত্যা করা হয়:মার্কিন সংবাদপত্র ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট জামাল খাসোগিকে সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল গত বছরের ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে ঢোকার সময়। তিনি সেখানে গিয়েছিলেন তার তুর্কি বান্ধবীকে বিয়ে করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জোগাড় করতে। সেখানে খাসোগিকে হত্যার সময়ের কথাবার্তা গোপনে রেকর্ড করেছিল তুর্কি গোয়েন্দা সংস্থা। সেই রেকর্ডিং শুনে গোটা বিশ্ব জানতে পারে কীভাবে নৃসংশভাবে হত্যা করা হয়েছিল এই সাংবাদিককে।
সৌদি সরকারের কঠোর সমালোচক খাসোগিকে তুরস্ক থেকে আটক করে রিয়াদে নিয়ে যাবার জন্য একটি দলকে সেখানে পাঠান সৌদি আরবের গোয়েন্দা সংস্থার উপ-প্রধান। তাকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে বা দরকার হলে জোর করে দেশে ফিরিয়ে আনতে বলা হয়েছিল এই দলটিকে। কিন্তু খাসোগি দেশে ফিরতে রাজি না হওয়ায় কনস্যুলেটের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এক পর্যায়ে তার শরীরে ইনজেকশন পুশ করে বিষাক্ত দ্রব্য ঢুকিয়ে তাকে মেরে ফেলা হয়। এরপর তার শরীর খণ্ড-বিখণ্ড করে স্থানীয় এক ‘দালালের’ হাতে তুলে দেওয়া হয় সেগুলো লুকিয়ে ফেলার জন্য। এখনো পর্যন্ত জামাল খাসোগির দেহ খুঁজে পাওয়া যায়নি। সৌদি ডেপুটি পাবলিক প্রসিকিউটর শালান দাবি করেছিলেন, এসবের কিছুই যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান জানতেন না।
এদিকে সমালোচনার জেরে সৌদি আরবে এ ঘটনায় মোট ১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। পাঁচজন উচ্চপদস্থ সৌদি কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়। এদের মধ্যে ছিলেন গোয়েন্দা সংস্থার উপ-প্রধান আহমেদ আসিরি এবং যুবরাজ মোহাম্মদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী সাউদ আল-কাহতানি।
ওরা ১১ জন: এই হত্যাকাণ্ডে গত জানুয়ারিতে রিয়াদের এক ফৌজদারি আদালতে ১১ ব্যক্তির বিচার শুরু হয়। এদের মধ্যে পাঁচজনের জন্য মৃত্যুদণ্ড চেয়েছিলেন সৌদি পাবলিক প্রসিকিউটর। এই ১১ জনের নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। তবে জাতিসংঘের কর্মকর্তা অ্যাগনেস ক্যালামার্ড জানিয়েছিলেন – যে পাঁচজনের জন্য মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি চাওয়া হয়েছিল, তারা হচ্ছেন ফাহাদ শাহিব আল-বালাউই, তুর্কি মুসারেফ আল-সেহরি, ওয়ালিদ আবদুল্লাহ আল-সেহরি, মাহেদ আবদুল আজিজ মুতরেব এবং ড. সালাহ মোহাম্মদ তুবাইগি। বাকী ছয়জন হচ্ছেন, মানসুর ওসমান আবাহুসেইন, মোহাম্মদ সাদ আল-যাহরানি, মুস্তাফা মোহাম্মদ আল-মাদানি, সাইফ সাদ আল-কাহতানি, মুফলি সায়া আল-মুসলিহ এবং আহমদ আসিরি। সৌদি পাবলিক প্রসিকিউটার জানান, সাউদ আল-কাহতানির ব্যাপারে তদন্ত করা হয়েছিল কিন্তু যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি, সে কারণে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়নি।
Leave a Reply