।।দিঘলিয়া ওয়েব ব্লগঃঃঅনুসন্ধান টিমঃনিজেস্ব প্রতিবেদক।।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে সম্পত্তির লোভে সৎ মাকে লোহার রডদিয়ে পেটানোর অভিযুক্ত আসামিরা ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রকাশ্যে। অথচ পুলিশ বলছে,আসামিরা পলাতক। প্রধান আসামি আছিদ আলী উডজেলার সিন্দুরখান ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় পুলিশ তাদের আটকে গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে পুলিশ বলছে আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।
গত ১৫ নভেম্বর বিকেলে লোহার রড দিয়ে সৎ ছেলে-মেয়েরা সকলে মিলে সৎ মা মায়া বেগমের ডান হাত ও মাথায় রক্তাক্ত জখম করে গুরুতর আহত করে। স্থানীয়রা তাকে দ্রুত উদ্ধার করে শ্রীমঙ্গল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। তার অবস্থা বেগতিক দেখে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সেখান থেকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
এ ঘটনায় মায়া বেগমের ছেলে জাফর আলী(২৭) তার সহোদর সৎ ভাই আছিদ আলী(৫০)সহ আরও নয়জনকে আসামী করে শ্রীমঙ্গল থানায় গত ১ ডিসেম্বর মামলা রজু (মামলা নং-১,২০১৯ ইং) করেন। আসামিরা হলো:আছিদ আলী(৫০),পারভীন গেম (৪০),উমর আলী(৪০),দিলারা বেগম (৩৫),আব্দুল আলী (৪২),শিউলী বেগম(৪৫),জামাল মিয়া(২৬),শাকিল মিয়া (২০),তারেক মিয়া(১৮) সগ অজ্ঞাত নামা ৬/৭ জন।
আসামিদের গ্রেপ্তার ও ঘটনার বিচারের দাবিতে বারবার প্রশাসনের দরজায় করা নারলেও পুলিশ এক মাসেও কাউকে গ্রেপ্তার কররেত পারেনি।
শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুছ ছালেক বলেন, এবিষয়ে জাফর থানায় একটি মামলা রজু করেছে। কিন্তু জাফর আলী সে নিজেই সম্পত্তির জন্য তার মাকে ভাপলো চিকিৎসা করাচ্ছে না। তার সৎ ভাই আছিদ আলী চিকিৎসার খরচ দিচ্ছে এবং তার মাকে আইসিইউতে নিতে অনেক টাকা খরচ করছে।
মামলার আইও শ্রীমঙ্গল থানার উপ-পরিদর্শক আলমগীর হোসেন মুঠো ফোনে বলেন,‘এই মামলার আসামী ধরা হয় নাই। আসামীরা এলাকায় অবস্থান করছে না। তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’
এবিষয়ে জাফরের সৎ ভাই মামলার প্রধান আসামি আছিদ আলীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে, এ ঘটনার দিন আমি বানায় ছিলাম না । আমি জুম্মার নামাজ পরে শ্রীমঙ্গল গাজীপুর একটা বিচারে গিয়ে ছিলাম । আমার স্ত্রীও সন্তানদের নিয়ে এক আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে গিয়ে ছিলো। তখন শ্রীমঙ্গল থানার পরিদর্শক(তদন্ত) সোহেল রানা আমাকে মুঠোফোনে ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন আপনার বাসায় কি হয়েছে । আমি বললাম শুনেছি আমার ছোট বোওনের সাথে একটা তর্কবিতর্ক হয়েছে। হওয়ার পর মনে হয় তাদের মধ্য একটু হাতাহাতি হয়েছে। পরের দিন হাসপাতাল থেকে মৌলভীবাজার তার বোনের বাসায় মাকে নিয়ে গিয়েছে। পরে চেয়ারম্যান ইউসুফ মিয়ার মাধ্যমে বিচার মেনে আমার বাসায় বিচার বসায়। পরে সেখানে বলা হয়েছে আমি সম্পত্তির লোভে আমার সৎ মাকে মারপিট করেছি। বিচারে তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। এবং সাক্ষীদের শিকারোক্তি অনুযায়ী আমি সেখানে ছিলাম না। পরে কিছুদিন পর ইউসুফ মিয়া ফোন দিয়ে জানান,আছিদ আলী বিচার করে শেষ করে দিলাম এখন আবার তোমার ভাই জাফর আইছে তোমার মার হাতে মনে হয় আঘাত লাগছে।হাতে এখন পছন ধরেছে তোমার মাকে মৌলভীবাজার থেকে সিলেট নেয়া হয়েছে।একথা শুনে আমি ৫ হাজার টাকা নিয়ে মার চিকিৎসার জনও দিয়ে আসি। সেখানে আমার স্ত্রী ছয় দিন ছিল পরে তাদের অত্যাচারী কথা বার্তা কারণে সে চলে আসে।আমি এখন পর্যন্ত ৭২ হাজার ৫ শ টাকা আমার সৎ মায়ের চিকিৎসার জন্য দিয়েছি।এবং প্রতিদিন মার খুঁজ খবর নিতেছি।
এ ঘটনায় গুরুতর আহত সৎ মা মায়া বেগম(৫৫) এক মাস ১৮দিন ধরে জ্ঞান হারিয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল হাসাপাতালের বেডে বর্তমানে আইসিইউতে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। এর আগে তাকে নল দিয়ে অল্প খাবার দেয়া হচ্ছিল। অবস্থা আরও বেগতিক হলে তাকে খাবার স্যালাইন দিয়ে কোনোমতে বাঁচিয়ে রাখা হয়। তিনি এখন অজ্ঞান অবস্থায় আইসিইউতে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।
তাঁর স্বামী উপজেলার সিন্দুরখান ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের আকবর আলী। তিনি গত ১৪ সেপ্টেম্বর দীর্ঘদিন অসুস্থ্য অবস্থায় থাকার পর নিজ বাড়ীতে মারা যান। তাঁর স্বামী মারা যাবার পরদিন থেকে সম্পত্তির লোভে পর সৎ ছেলে-মেয়ে ও তাদের স্ত্রী সন্তানেরা স্বামীর রেখে যাওয়া বসত ঘর জোরপূর্বক দখলে নিয়ে অবস্থান করতে থাকে। তাকে দিনরাত জ্বালাতন শুরু করে। এ নিয়ে ঝগড়া বিবাদ শুরু হয়।
জাফর আলী অভিযোগ করেন, তাঁর বাবা আকবর আলীর দুই সংসার ছিলো। প্রথম সংসারের স্ত্রী তাঁর বড় মা খোদেজা বেগম। তিনি ৪/৫ বছর আগে মারা যান। ওই সংসারে তার দুই ভাই ও চার বোন রয়েছে। তারা সবাই বিবাহিত। দ্বিতীয় স্ত্রী তার মা মায়া বেগমের সংসারে তারা দুই ভাই ও দুই বোন ছিলেন। এর মধ্যে তার ছোট ভাই হাসান কে চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারী সম্পত্তির লোভেই পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়। অন্য সবাই বিবাহিত। এঘটনায় একটি মামলা বর্তমানে ঢাকা সি আইডিতে তদন্তাধীন আছে। তিনি এ মামলার বাদী। তার বাবা আকবর আলী সাড়ে তিনমাস আগে মারা যাবার পর আছিদ আলী আমাদের বসতঘর দখলে নিয়ে গেছেন।
তার অভিযোগ, আছিদ আলীর দাবী মতো তার বাবা আকবর আলী জীবিতবস্থায় শুধু তাঁর স্ত্রীর নামেই ৬ কেয়ার জমি লিখে দেন। ওই জমিতে তিনি বাড়ী ঘর করে বসবাস করছেন। অবশিষ্ট ৫ কেয়ার পরিমাণ জমিতে আছিদ আলীর ভাই ওমর আলী ও আমরা মিলে মিশে বসবাস করছি।
এ ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্না করতে করতে জাফর আলী বলেন,‘আমার সৎ ভাই আছিদ আলী ও তাঁর ভাইবোনেরা মিলে সম্পদের জন্য আমার মাকে লোহার রড দিয়ে মারধর করেছে। তার মাথায় ও ডান হাতে ১২টি সেলাই দেয়া হয়েছে। তিনি এখন মৃত্যু শয্যায়। সম্পত্তির লোভে তারা আমাকেও মেরে ফেলতে চেয়েছিল। আমার ছোট ভাই হাসানকেও পরিকল্পিতভাবে মেরে ফেলা হয়। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের উত্তরাধিকারী সনদে আমাদের ভাইবোনের নাম রেখে শুধু আমার মায়ের নাম বাদ দিয়ে সার্টিফিকেট তুলেন আছিদ আলী। বিষয়টি জেনে চেয়ারম্যান বরাবারে পুন:রায় আবেদন করি।
জাফর আলীর অভিযোগ,তাঁর মামলার আসামীরা প্রকাশ্যে আমার বসতঘরে রাতদিন অবস্থান করছে। বসবাস করছে,ঘোরাঘুরি করছে। থানায় মামলা রেকর্ড করা হলেও তাদের পুলিশ ধরছে না। আমরা বিচার চাইবো কার কাছে।
Leave a Reply