।।সন্তানের পিতৃপরিচয়ের জন্য এক মায়ের ২৬ বছরের লড়াই।।
।।দিঘলিয়া ওয়েব ব্লগ অনলাইন ডেস্ক রিপোর্ট।।
জানা গেছে, ১৯৯৩ সালে ২৫ অক্টোবর উপজেলার খাড়েরা ইউনিয়নের ধামসার গ্রামে মাছ ধরার মাচায় বসে বাবার জাল পাহারা দেওয়ার সময় ওই নারী যখন ধর্ষণের শিকার হন, তখন তার বয়স ছিল ১৩ বছর। ধর্ষক ওই গ্রামের কালন মিয়ার ছেলে সফিকুল ইসলাম। বিষয়টি ওই শিশু বাড়িতে গিয়ে তার মাকে বললে তার মা ধর্ষক সফিকের মা আম্বিয়া বেগমকে জানালে তিনি শিশুটির মাকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে এ ব্যাপারে চুপ থাকতে বলেন। এর মধ্যে ওই ধর্ষিত শিশুটির শারীরিক পরিবর্তন সবার চোখে ধরা পড়তে থাকলে ধর্ষক সফিক ও তার মা ঘটনা বেমালুম অস্বীকার করতে শুরু করে। তখন বিষয়টি গ্রামের মাতবরদের জানান ধর্ষিতার বাবা।
১৯৯৪ সালের ২ জুন ধর্ষিতা বাদী হয়ে ধর্ষক সফিকসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। ওইদিন বিকেলে কসবা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। এ সংবাদ একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হলে একটি বেসরকারি সংস্থা মা ও মেয়েকে তাদের জিম্মায় নিরাপদ হেফাজতে নিয়ে যায়। পরে আদালতের নির্দেশে ২০ জুন ১৯৯৪ সালে কসবা থানা এ ঘটনায় এফআইআর নথিভুক্ত করে মামলার তদন্তভার তৎকালীন এসআই নূরুল ইসলামকে দেন। পরে মামলার তদন্তভার ন্যস্ত হয় সিআইডির ওপর। ১৯৯৯ সালের ৯ মার্চ মামলার রায়ে আসামি সফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে বেকসুর খালাস দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে ওই নারী হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করলে ২০১০ সালের ১০ মে এক রায়ে নিম্ন আদালতের রায় বাতিল করে অভিযুক্ত ব্যক্তির ডিএনএ পরীক্ষা এবং সাক্ষীদের ফের সাক্ষ্য গ্রহণের আদেশ প্রদানসহ পুনরায় বিচারের আদেশ দেন।
পরে গত বছরের ৩১ অক্টোবর এক আবেদনে আসামির ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আদালতের শরণাপন্ন হলে পরবর্তী তারিখ ২৮ নভেম্বর ডিএনএ পরীক্ষার আদেশ দেন এবং আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এ আদেশ পৌঁছেনি বলে জানা গেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা. শাহ আলম ডিএনএ পরীক্ষার কোনো আদেশ পাননি বলে জানিয়েছেন। কসবা থানার ওসি লোকমান হোসেন জানান, সফিকুল ইসলাম নামে কোনো আসামির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থানায় পৌঁছেনি।
এদিকে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদিকা শামীমা সিকদার দীনা বলেন, এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধের জন্যই মামলাটির দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন। ভিকটিম যাতে ন্যায়বিচার পান, তা রাষ্ট্রকেই নিশ্চিত করতে হবে।
এ ব্যাপারে বাদী পক্ষের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সৈয়দ মো. জামাল বলেন, হাইকোর্টের রায় দীর্ঘদিন ধরে নিম্ন আদালতে এভাবে পড়ে থাকা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। এ মামলার সংশ্নিষ্ট রাষ্ট্রপক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবীরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। যেহেতু মামলাটি স্পর্শকাতর, তাই দ্রুত নিষ্পত্তি হোক এটাই প্রত্যাশা।
Leave a Reply