যথাযোগ্য মর্যাদায় বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস সারাদেশে পালিত হয়েছে।
কর্মসূচির মধ্যে ছিল সুভেনির প্রকাশ,ভিডিও ক্লিপ প্রদর্শন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন, সিপিবির স্বেচ্ছাসেবক পুরস্কার বিতরণ, ক্রোড়পত্র প্রকাশ, পোস্টার ও লিফলেট বিতরণ,আলোচনা অনুষ্ঠান, গোলটেবিল বৈঠক, ভূমিকম্প ও অগ্নিকাণ্ড বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি মহড়া, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার ইত্যাদি।
জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস-২০২২ উদযাপনের অংশ হিসেবে গত বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) ঢাকায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ড. মো. এনামুর রহমান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন । দুর্যোগ
ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সচিব মো. কামরুল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আতিকুল হক বক্তৃতা করেন ।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রতিমন্ত্রী বলেন,ভৌগলিক অবস্থান ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে বিভিন্ন দুর্যোগ আঘাত হানছে। পৃথিবীর সর্বোচ্চ দুর্যোগপ্রবণ ১৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। প্রতিবছর বন্যা, ভূমিধ্বস, বজ্রপাতসহ নানান দুর্যোগ আমরা মোকাবিলা করে থাকি। গত ২০২০ সালের মার্চ থেকে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে করোনা ভাইরাস। এ মহামারির সময়েও প্রায় এক কোটি ২৫ লাখ পরিবারকে তালিকা করে নিয়মিতভাবে তাদেরকে মানবিক সহায়তা দিয়েছে সরকার।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী মুজিববর্ষে ঘোষণা দিয়েছিলেন, এদেশে কেউ ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না, প্রত্যেকের ঠিকানা হবে। সেজন্য দরিদ্র গৃহহীন মানুষকে দুর্যোগ থেকে সুরক্ষা দিতে বর্তমান সরকার দুর্যোগ সহনীয় গৃহনির্মাণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১১ হাজার ৬০৪টি, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৭ হাজার পাঁচটি, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৬৬ হাজার ২৯১টি দুর্যোগ সহনীয় ঘর নির্মাণ করে হস্তান্তর করেছে।
এনামুর রহমান বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরে এক হাজার ১১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আরও ৪০ হাজার দুর্যোগ সহনীয় ঘর তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। যেগুলো চলতি মাসের শেষে প্রধানমন্ত্রী হস্তান্তর করবেন। আমরা বিভিন্ন জায়গায় এ ঘরগুলো পরিদর্শনে গিয়েছি। আমরা বুঝতে পেরেছি, ঘরগুলো মানুষকে ক্ষমতায়িত করেছে, তাদের সম্মান বাড়িয়েছে। জীবনযাত্রার মান আরও উন্নত করেছে। নারীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছে।
করোনা সংকটে অনেক মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবার দারিদ্র্যসীমার মধ্যে নেমে এসেছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী, আমরা তাদের জন্য ৩৩৩ নম্বর চালু করেছিলাম, যেটি এখনো চালু আছে। এ নম্বরে ফোন করে যারা খাদ্য সহায়তা চেয়েছেন, তাদের বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। প্রায় ২২ লাখ পরিবার ৩৩৩ নম্বরের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা পেয়েছেন বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।
বিগত ঘূর্ণিঝড়গুলোতে মৃত্যু শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশ্বের কাছে রোল মডেল। ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে এ পর্যন্ত ৪২৩টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র, ২২০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণকাজ শেষ করেছি। সাড়ে পাঁচশ মুজিব কেল্লা তৈরির কাজ চলমান।
তিনি আরও বলেন, আমাদের ৪৫৭টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন রয়েছে। আরও ১১০টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন করার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশকে ভূমিকম্প সহনীয় দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে জাপানের সঙ্গে চার দফা বৈঠক হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, একটি সমঝোতা স্মারক তৈরি হয়েছে। সেই অনুযায়ী তিনটি ধাপে বাংলাদেশকে ভূমিকম্প সহনীয় রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রথম দফায় তারা সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করবে। দ্বিতীয় দফায় একশ থেকে দুইশ বছরের পুরোনো যে ভবনগুলো আছে সেগুলো ধ্বংস করে জাপানের আর্থিক সহায়তায় ভূমিকম্প সহনীয় ভবন নির্মাণ করা হবে। এরপর যে ভবনগুলো তৈরি করা হয়েছে, সেগুলোর ভূমিকম্প সহনীয়তা পরীক্ষা সংস্কার করা হবে।
অনুষ্ঠানে ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইনসহ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভা শেষে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) স্বেচ্ছাসেবকদের মাঝে সনদপত্র বিতরণ করেন প্রতিমন্ত্রী।
Leave a Reply