বাংলাদেশের বৃহত্তম ১৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধনের পর দেশের শতভাগ জনগণকে বিদ্যুতের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত সোমবার (২১ মার্চ) বেলা ১১টা ৪৮ মিনিটে বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্বোধন ঘোষণা করে তিনি দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দেন।
পরিবেশ বান্ধব আল্ট্রা-সুপারক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির সাহায্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করার মাধ্যমে বাংলাদেশ “মুজিব বর্ষে” দেশকে শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আনার সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করে আরেকটি মাইলফলক অর্জন করেছে। মুজিব বর্ষ শেষ হচ্ছে আগামী ৩১ মার্চ। কভিড-১৯ মহামারির প্রাদুর্ভাবে বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্ব থমকে দেয়ার পর এটিই স্বশরীরে প্রধানমন্ত্রীর প্রথম কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন।
পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি দক্ষিণ পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার অন্তর্গত রামনাবাদ নদীর পাশে ২৪৮ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে এক হাজার একর জমিতে নির্মিত হয়েছে। এবং এ প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে আল্ট্রা সুপারক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিশ্বের ১৩তম দেশে পরিণত হয়েছে।
পাওয়ার প্ল্যান্টের প্রথম ৬৬০ মেগাওয়াট ইউনিটটি ২০২০ সালের মে মাসে বাণিজ্যিকভাবে চালু হয় ৪০০ কেভি পায়রা-গোপালগঞ্জ পাওয়ার ট্রান্সমিশন ব্যবহার করে এবং দ্বিতীয়টি ২০২১ সালের ডিসেম্বরে উৎপাদন শুরু করে।
পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়াও আরেকটি পাওয়ার প্ল্যান্টের নির্মাণকাজ চলছে। এবং সরকারের আরও একটি এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং পায়রায় একটি সোলার সিস্টেম পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
প্ল্যান্টটি তৈরি করছে বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি (বিসিপিসিএল), চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি) এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (এনডব্লিউপিজিসিএল) এর মধ্যে একটি ৫০:৫০ যৌথ উদ্যোগ।
বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি (প্রা.) লিমিটেড, এনইপিসি ও সিইসিসি’র কনসোর্টিয়াম পায়রা এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়নের জন্য ২৯ মার্চ ২০১৬ তারিখে ইপিসি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার যে দেশগুলো তাদের জনসংখ্যার ৯৮ শতাংশ ও ৭৪ শতাংশকে বিদ্যুৎ নেটওয়ার্কের আওতায় এনেছে, সে তালিকায় বাংলাদেশ এখন ভারত ও পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ২৫ হাজার ৫১৪ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে, যা ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে চার হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট ছিল। এর মধ্যে এক হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। এবং ১৯ হাজার ৬২৬ মেগাওয়াট স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা হচ্ছে।
২০০৯ সালে জনসংখ্যার মাত্র ৪৭ শতাংশ বিদ্যুতের আওতায় ছিল। মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ২২০ কিলোওয়াট থেকে ৫৬০ কিলোওয়াটে উন্নীত হয়েছে এবং বিদ্যুতের বিতরণ ক্ষতি ৫ দশমিক ৮৫ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে।
সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে স্থানীয় চর সোনারামপুর, আশুগঞ্জ, রাঙ্গাবালী, মনপুরা, সন্দ্বীপ, হাতিয়া, নিঝুম দ্বীপ ও কুতুবদিয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের নামফলক উন্মোচন করেন এবং শান্তির প্রতীক এক হাজার ৩২০টি পায়রা ওড়ান এবং প্ল্যান্টের সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুম ঘুরে দেখেন।
এর পূর্বে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র সংলগ্ন হেলিপ্যাডে প্রধানমন্ত্রী পৌঁছালে তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
পরে প্রধানমন্ত্রী কয়লা জেটিতে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন রঙে সজ্জিত ২০০ জেলে সুসজ্জিত নৌকা থেকে পতাকা উড়িয়ে এবং গান বাজিয়ে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানায়। পরে প্রধানমন্ত্রীকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে “মেমেন্টো” উপহার দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার প্রাইভেট লিমিটেড পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস প্রধানমন্ত্রীর হাতে কোম্পানির পক্ষ থেকে অনুদানের চেক তুলে দেন।
পর্যটন স্পট কুয়াকাটা থেকে পায়রা পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং এর আশপাশের এলাকাগুলোতে প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে উৎসবের আমেজ বিরাজমান ছিল।
প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি (প্রা.) লিমিটেডের মহাপরিচালক (ডিজি) ইঞ্জিনিয়ার এ এম খুরশেদুল আলম। বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতির ওপর একটি অডিও-ভিডিও উপস্থাপন এবং পায়রা তাপ বিদ্যদুৎ কেন্দ্রের ওপর তথ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
সূত্রঃ বাসস
Leave a Reply