প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা কারো সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই না। যুদ্ধ আমরা করবো না। জাতির পিতা আমাদের যে পররাষ্ট্রনীতি শিখিয়ে গেছেন, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়। আমরা সেই নীতিতে বিশ্বাস করি কিন্তু আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। কখনো যদি বহিঃশত্রুর আক্রমণ হয়, আমরা যেন তা যথাযথভাবে প্রতিরোধ করতে পারি। আমরা যেন দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে পারি। সেভাবেই আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে আমি প্রশিক্ষিত, সমৃদ্ধশালী করার পদক্ষেপ নিয়েছি। আমি মনে করি, আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর প্রজ্ঞা, পেশাগত দক্ষতা এবং নিষ্ঠা আমাদের দেশের সুনাম উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করবে।
মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) শরীয়তপুরের জাজিরায় ‘শেখ রাসেল সেনানিবাস’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা সব সময় চেয়েছি বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। সব দিক থেকে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি সদস্য উপযুক্ত হয়ে গড়ে ওঠে সেটাই আমার লক্ষ্য ছিল।
দক্ষিণ অঞ্চলের উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি যখন সরকারে আসি এবং জাপানে যাই, তখন জাপান সরকারের সঙ্গে আমার কথা হয়। আমি তাদের কাছে দুটি সেতু—পদ্মা ও রূপসা সেতু নির্মাণের জন্য অনুরোধ জানাই এবং তারা তাতে রাজি হয়। ফিজিবিলিটি স্টাডি করে এবং আমি পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি ২০০১ সালে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, ২০০১ সালে বিএনপি জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর তা বন্ধ করে দেয়। তার সেখান থেকে পদ্মা সেতু অন্য দিকে সরিয়ে নিতে চায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্বিতীয়বার সরকারে আসার পর আমারা উদ্যোগ নিই কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এর অর্থ বন্ধ করে দেয় একটা মিথ্যা অপবাদ দিয়ে যে দুর্নীতি হয়েছে। সেটা আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করি এবং তাদের বলি এটা প্রমাণ করতে হবে। তারা তা প্রমাণ করতে পারেনি। মামলা হয় এবং এটাই রায় হয় যে, কোনো দুর্নীতি হয়নি বা দুর্নীতির কোনো সম্ভাবনাও ছিল না। আমি সিদ্ধান্ত নিই কারো অর্থ না। যেহেতু মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে এর জবাব আমরা দেবো। পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে করবো। এটা একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। অনেকে ভেবেছিল এটা আমরা করতে পারবো না কিন্তু আমি জানি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তার ৭ মার্চের ভাষণে যে কথাটা বলে গেছেন বাঙালিদের সম্পর্কে, কেউ দাবায়া রাখতে পারবা না। বাঙালিদের কেউ দাবায়া রাখতে পারে না, পারবে না। আমরা যদি ইচ্ছা করি, অসাধ্য সাধন করতে পারি। ৯ মাসে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে তা প্রমাণ করেছি। আজ পদ্মা সেতু আমরা নির্মাণ করেছি। তার কাজও প্রায় সম্পন্ন।
তিনি আরও বলেন, আমি জাতির কাছে কৃতজ্ঞ, তাদের সাহসী ভূমিকা এবং তাদের সমর্থন পেয়েছি বলেই এটা করা সম্ভব হয়েছে। তা ছাড়া, আন্তর্জাতিক বন্ধুপ্রতীম দেশও আমাদের সমর্থন দিয়েছে। শুধু নির্মাণ না, এর নিরাপত্তা বিধানও আমাদের একান্তভাবে প্রয়োজন। আর সেই নিরাপত্তা বিধানের জন্য আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। এই সেতু নির্মাণে মধ্য দিয়ে আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থারই শুধু উন্নতি হবে না, সঙ্গে সঙ্গে আর্থ-সামাজিক উন্নতিও হবে। আজ আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে পেরেছি। প্রতিটি গৃহহারা মানুষকে ঘর তৈরি করে দিচ্ছি। সেটাও আমরা সেনা বাহিনীকে দিয়ে করিয়েছিলাম। পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও জলবায়ু অভিঘাত থেকে আমাদের দক্ষিণ অঞ্চল থেকে রক্ষা করার জন্য ওই অঞ্চলের উন্নয়নটা একান্তভাবে দরকার।
Leave a Reply