।।আত্রাইয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২০ পালন।।
।।দিঘলিয়া ওয়েব ব্লগঃঃএমরান মাহমুদ প্রত্যয়,আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি।।
নওগাঁর আত্রাইয়ে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২০ পালিত এবং তিন দিন ব্যাপী অমর একুশে বই মেলার উদ্বোধন করা হয়েছে।
আজ শুক্রবার অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি। রক্তস্নাত ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবহ মহান শহীদ দিবস। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি পূরণের ৬৩ বছর পূর্ণ হচ্ছে এই দিনে। বাঙালি জাতির চির প্রেরণা ও অবিস্মরণীয় এই দিনটি শুধু বাংলাদেশে নয়, সারাবিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হবে। জাতির জীবনে শোকাবহ, গৌরবোজ্জ্বল, অহঙ্কারে মহিমান্বিত চিরভাস্বর দিন আজ। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ছিল ঔপনিবেশিক প্রভুত্ব ও শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালির প্রথম প্রতিরোধ এবং জাতীয় চেতনার প্রথম উন্মেষ। মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রাখতে গিয়ে সেদিন বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিল সালাম, রফিক, জব্বার, বরকত, সফিউররা। পৃথিবীর ইতিহাসে মাতৃভাষার জন্য রাজপথে বুকের রক্ত ঢেলে দেয়ার প্রথম নজির এটি। সেদিন তাঁদের রক্তে শৃঙ্খলমুক্ত হয়েছিল দুঃখিনী বর্ণমালা, মায়ের ভাষা। আর এর মাধ্যমে বাঙালি জাতিসত্তা বিকাশের যে সংগ্রামের সূচনা হয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় পথ বেয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মধ্যদিয়ে তা চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। একুশে ফেব্রুয়ারি তাই বাঙালির কাছে চির প্রেরণার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। একুশের প্রথম প্রহর থেকেই জাতি কৃতজ্ঞ চিত্তে ভাষা শহীদদের স্মরণ করছে। হৃদয়ের সবটুকু আবেগ ঢেলে দিয়ে সকলের কণ্ঠে বাজছে বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট আব্দুল গাফফার চৌধুরী রচিত একুশের অমর শোকসঙ্গীত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি…।’
এই শোকসঙ্গীতটি প্রজন্মের পর প্রজন্মকে নাড়া দিয়ে যাচ্ছে। আজ সারাদেশের সবকটি শহীদ মিনার ফুলে ফুলে ভরে ওঠছে। মাতৃভাষার মর্যাদা রাখতে গিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে বাঙালি জাতি যে ইতিহাস রচনা করেছিল, শুধু বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্ব তাকে বরণ করেছে সুগভীর শ্রদ্ধায়। বাঙালির রক্তস্নাত ভাষা আন্দোলনের স্বীকৃতি দিয়ে জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে। এরপর থেকেই যথাযোগ্য মর্যাদায় সারা বিশ্বে একযোগে পালিত হয়ে আসছে দিনটি। ২১শে ফেব্রুয়ারি আজ বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। বাঙালির ভাষা সংগ্রামের অমর কীর্তিগাথা আজ সারা দুনিয়ার অহংকার। ৬৩ বছর আগের এই দিনে বাংলার সংগ্রামী ছেলেরা যে ত্যাগ ও গৌরবগাথা রচনা করেছিলেন, তারই পথ ধরে আমরা মুখোমুখি হই স্বাধীনতা সংগ্রামে। রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। লাভ করি লাল সবুজের পতাকা। মধ্যরাতে একুশের প্রথম প্রহরে উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ১মিনিট নিরবতা পানল করে ভাষা শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা নানা রকম কর্মসূচির শুভ সূচনা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ছানাউল ইসলাম।এ সময় উপজেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের পক্ষে শহীদের শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় শহীদ মিনার। নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের হৃদয় নিংড়ানো শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় সিক্ত হয় স্মৃতির মিনার। একুশের প্রথম প্রহরে শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় ভাষা শহীদদের প্রতি।
সকাল ৬.০০টার সময় উপজেলা প্রশাসন এবং উপজেলার বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন একত্রিত হয়ে এক বর্ণাঢ্য প্রভাত ফেরীতে অংশ নেয় এলাকার বিভিন্ন পেশার মানুষ।প্রভাব ফেরী উপজেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু করে,উপজেলার বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করে।
পরে উপজেলা শহীদ মিনার চত্বরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃছানাউল ইসলামের সভাপতিত্বে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন,উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃএবাদুর রহমান। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শ্রী নিপৃন্দ্রনাথ দত্ত দুলাল, সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী গোলাম মোস্তফা বাদল, আত্রাই থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মোসলেম উদ্দিন,আত্রাই প্রেসক্লাব সভাপতি মোঃ রুহুল আমীন, সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান সেন্টু, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শেখ মোঃ হাফিজুল ইসলাম, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মমতাজ বেগম সহ উপজেলার সকল সরকারী বেসরকারী কর্মকর্তা কর্মচারী বৃন্দ।
আলোচনা সভা শেষে তিন দিন ব্যাপী অমর একুশে বইমেলা উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মোঃ ছানাউল ইসলাম ।
পরবর্তীতে প্রধান অতিথিসহ অন্যান্যবৃন্দ মেলায় অংশগ্রহণকারী স্টলগুলো পরিদর্শন করেন। অনুষ্ঠানে আত্রাই উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, বিভিন্ন সরকারি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ এবং বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply